Wednesday, December 20, 2017

আপনি জানেন  কি? পৃথিবীতে ২৪ ঘন্টাই আজান তথা আল্লাহ্পাক এর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। জানতে হলে এই পোস্টটা পড়ুন।প্রতি মূহুর্ত্যে পৃথিবীতে আল্লাহর নাম ইথারে ভেসে বেড়ায়।



মুয়াযযিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার ‘পরে
কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আযানে!
জাগাইতে মোহমুদ্ধ মানব সন্তানে।
আহা কি মধুর ওই আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।… কায়কোবাদ।

হ্যাঁ এই আযানকে নিয়ে আমার আজকের এই পোস্ট। কবি কায়কোবাদের মত করে আমি কখনো আযান শুনি নাই, বা আযান নিয়ে কখনো ভাবি নাই। আযান আমার কাছে দিনে আরো ১০টি নিত্য ঘটে যাওয়া বিষয়ের মত লাগলতো।

কিন্তু আযান যে, দিন-দুনিয়ার ভুলে যাওয়া মানূষকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, হে মানুষ আস, এই দুনিয়ার কাজের ফাঁকে ফাঁকে অল্প কিছু সময় ব্যয় কর-সেই আল্লাহ নামে, যিনি তোমাকে এক শুণ্য থেকে একদিন সৃষ্টি করেছিলেন।

আর এই আহ্বান প্রতিমুহুর্ত্যে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও মুয়াজ্জিন স্মরন করিয়ে দিয়ে চলছেন নিরবদি, তা সে ভাবে কখন মনে হয় নাই।

এ যেন শুধু আযান নয়, যেন তৌহিদের এক তরংগ~ পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে —তা ক্রমাগত– বিরামহীন ভাবে– পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। এই আহ্বান ক্রমাগত চক্রাকারে বহে চলছে, আর তা ক্রমাগত বিস্তৃর্ন হচ্ছে। আর পৃথিবী বাসিকে আহ্বান জানাচ্ছে- আসো কল্যাণের পথে—আসো শান্তির পথে.।

স্বাভাবিক ভাবে মুয়াজ্জিন যখন আযান করেন তখন প্রতি আযানে ৪ মিনিট সময় ব্যয় হয়ে থাকে।

আপনারা জানেন যে আমাদের এই পৃথিবীকে ৩৬০ দ্রাঘিমাংশ তে ভাগ করা হয়েছে, এবং ১ ভাগ থেকে আরেক ভাগের সময়ের ব্যবধান ৪ মিনিট।

আর এই আযান শুরু হয় ১ দ্রাঘিমাংশ এলাকা থেকে,
দ্রাঘিমাংশ এলাকার আযান শেষ হলে পর ২ দ্রাঘিমাংশ এলাকায় আযান শুরু হয়, আর এভাবে ক্রমান্নে আযান এক দ্রাঘিমাংশ এলাকা থেকে আরেক দ্রাঘিমাংশ এলাকায় চলে চলে। ৩৬০ দ্রাঘিমাংশ পুর্ণ করে।

এইটি সোজা এক গানিতিক হিসাব করে দেখুন-
৪x৩৬০(দ্রাঘিমাংশ) = ১৪৪০ মিনিট
১৪৪০ মিনিট /৬০ মিনিট= ২৪ ঘন্টা।
তার মানে আযানের আহ্বান এই দুনিয়ায় কখনো বন্ধ হয়না।

এবার ভৌগলিক ভাবে এক নজর দেখে নেই-
পৃথিবীর মানচিত্রে সবচেয়ে পূর্ব প্রান্তের মুসলিম দেশ হলো ইন্দোনেশিয়া । এ দেশের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে সাবিল, জাভা, সুমাত্রা, বর্নিয়া । রাতের অন্ধকার কেটে গেলে স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রভাতের আগমনকে স্বাগত জানাতে সাবিল থেকে শুরু হয় হাজার হাজার ইন্দোনেশীয় মোআজ্জিনদের কন্ঠের সুমধুর আজানের প্রতিধ্বনি। ফজরের আজানের এই প্রক্রিয়া ক্রমেই এগিয়ে চলে পশ্চিমের দিকে।
সাবিলের আজান শেষ হওয়ার প্রায় দেড় ঘন্টা পরই জাকার্তায় প্রতিধ্বনিত হয় আজানের সুর। এর পরই সুমাত্রায় শুরু হয় আজানের এই পবিত্র প্রক্রিয়া, ইন্দোনেশিয়ার পরিসরে শেষ হওয়ার পূর্বেই তা শুরু হয়ে যায় পরবর্তী মুসলিম দেশ মালয়শিয়ায় ।
বার্মার স্থান রয়েছে এর পরপরই, এবং জাকার্তায় শুরু হওয়ার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আজানের সুর পৌঁছে যায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। বাংলাদেশের পর আজানের জয়যাত্রা ধ্বনিত হয় পশ্চিম ভারতের বুকে, কলকাতা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত এবং তারপর এগিয়ে যায় বোম্বের দিকে । শ্রীনগর এবং শিয়ালকোট (পাকিস্তানের উত্তরের একটি শহর ) শহর দু’টিতে আজানের সময় একই সাথে শুরু হয়। শিয়ালকোট, কুয়েটা এবং করাচির মধ্যে সময়ের পার্থক্য চল্লিশ মিনিটের মত । তাই এ সময়ের মধ্যে সমগ্র পাকি¯তান জুড়ে শোনা যায় আজানের সুর। সেই সুর পাকিস্তানে মিলিয়ে যাবার আগেই আফগানিস্তান আর মাস্কাতে এর ঢেউ এসে লাগে। বাগদাদের সাথে মাস্কাতে সময়ের পার্থক্য এক ঘন্টার। আজানের আহ্বান প্রতিধ্বনিত হয় ‘হিযায-ই-মুকাদ্দাস’ (মক্কা ও মদিনার পবিত্র শহরসমূহ), ইয়েমেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত এবং ইরাকের আকাশে- বাতাসে।
বাগদাদ এবং মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার সময়ের পার্থক্যও এক ঘন্টা । তাই এ সময়ের মধ্যে সিরিয়া, মিশর, সোমালিয়া এবং সুদানে চলতে থাকে আজান। পূর্ব ও পশ্চিম তুরস্কের মধ্যে ব্যবধান দেড় ঘন্টার, এ সময়ের মাঝে সেখানে নামাজের আহ্বান শোনা যায়।
আলেকজান্দ্রিয়া এবং ত্রিপলি ( লিবিয়ার রাজধানি ) এক ঘন্টার ব্যবধানে অবস্থিত। একই ভাবে আজানের প্রক্রিয়া সমগ্র আফ্রিকা জুড়ে চলতে থাকে। তাওহিদ এবং রিসালাতের প্রচারের যে ধারা শুরু হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ায় তা এসে আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ব ঊপকূলে পৌছে সাড়ে নয় ঘন্টা পর। ফজরের আজানের বার্তা আটলান্টিকের ঊপকূলে পৌছাবার পূর্বে ইন্দোনেশিয়ার পূর্বাঞ্চলে যোহরের আজানের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় এবং ঢাকায় এটা পৌছানোর পূর্বে শুরু হয়ে যায় আছরের আজান। দেড় ঘন্টার মত সময় পেরিয়ে এ প্রক্রিয়া যখন জাকার্তায় পৌছে ততক্ষনে সেখানে মাগরিবের সময় হয়ে আসে, এবং মাগরিবের সময় সুমাত্রায় শেষ না হতেই সাবিলে এশার আজানের আহ্বান ভেসে আসে।
একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই আমাদের চোখে পড়বে আজানের অবাক করা দিকটি আর তা হলো পৃথিবীর বুকে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও হাজার হাজার মোআজ্জিনের গলায় আজানের সুর ভেসে বেড়ায়। এমনকি আপনি যে মুহূর্তে এ অংশটি পড়ছেন , নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে ঠিক এই মুহূর্তেও এই পৃথিবীর কোথাও না কোথায় অন্তত হাজার খানেক মানুষ শুনতে পাচ্ছে আজানের সুর, মোআজ্জিনদের গলায়, আর এমনি করে সে আহ্বান ভেসে বেড়াচ্ছে ইথারে প্রতিটি মুহূর্তে ।

No comments:

Post a Comment

আপনি জানেন কি? পৃথিবীতে ২৪ ঘন্টাই আজান তথা আল্লাহ্পাক এর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। জানতে হলে এই পোস্টটা

এবার প্রাইমারিতে ১০,০০০ শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

      Post Name: Pre Primary Assistant Teacher Total Post: 10,000 Last Date of Application: 30 August 2018